স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :
করোনায় বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মাঝেও ভালো পারফর্ম করছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিসহ সংশ্লিষ্টদের বেশ কিছু পদক্ষেপে টানা উত্থানও দেখা গেছে। ফলে শেয়ারবাজার নিয়ে আগের চেয়ে আশাবাদী ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও।
এশিয়া ফ্রন্টিয়ার ক্যাপিটাল লিমিটেডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর—এই তিন মাসে শেয়ারবাজার উত্থানে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে বাংলাদেশ। এমনকি ২৪.৪ শতাংশ উত্থানের মধ্য দিয়ে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার। এই সাফল্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। তবে এই দেশ দুটিও বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশের পরের স্থানে থাকা পাকিস্তানের শেয়ারবাজারে জুলাই-সেপ্টেম্বরে উত্থান হয়েছে ১৯.৪০ শতাংশ। ১৭ শতাংশ উত্থানের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানটি দখল করেছে শ্রীলঙ্কার শেয়ারবাজার। চতুর্থ স্থানে থাকা সৌদি আরবের শেয়ারবাজারের অগ্রগতি হয় ১৪.৯ শতাংশ এবং পঞ্চম স্থানে থাকা সুইডেনের শেয়ারবাজারে উত্থান হয় ১৪.৩ শতাংশ।
এর আগে গত আগস্টেও বাংলাদেশের শেয়ারবাজার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করে। ওই সময় উত্থান হয় ১৫.৮ শতাংশ। সে সময় দ্বিতীয় স্থানে ছিল ভিয়েতনাম। ওই সময় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভিয়েতনামের শেয়ারবাজারে উত্থান হয় ১০.৪০ শতাংশ। ৭.৪০ শতাংশ উত্থানের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে ছিল রুমানিয়া।
এশিয়া ফ্রন্টিয়ার ক্যাপিটালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে ২৪.৪ শতাংশ এগিয়েছে, যা এশিয়া ও বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পারফর্ম্যান্স।’
কম সুদের হার, করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। এর পাশাপাশি রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে সাফল্য এই জাগরণে ভূমিকা রেখেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের উত্থান হয়েছে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের দ্বারা। বিদেশিদের নিট বিক্রির পরিমাণ বেশি সত্ত্বেও দেশীয় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ দ্বারা এই উত্থান হয়েছে।
এদিকে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষস্থানটি দখল করেছে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশ রয়েছে তৃতীয় স্থানে। শেষ ১২ মাসে প্রতিদিন গড়ে ভিয়েতনামের শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়েছে ১৯০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা পাকিস্তানের শেয়ারবাজারে শেষ ১২ মাসে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬৬ মিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে গড়ে প্রতিদিন লেনদেন হয়েছে ৫০ মিলিয়ন ডলার।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ বছর দেশের শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে ব্যাংকের বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মূলধন, ভালো কম্পানির আইপিও ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাড়ানোর উদ্যোগসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বিশেষ করে শেয়ারবাজার পরিচালনায় দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন কমিশন সুশাসন ফেরাতে আইন সংস্কার ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেয়। আইনের ব্যত্যয় করায় তালিকাভুক্ত কম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে জরিমানা করতে থাকে। এসব পদক্ষেপে এই বাজারে আস্থা ফিরতে থাকে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর বিনিয়োগকারীর আস্থা ও সুশাসন ফেরানোর ওপর জোর দেওয়া হয়। বিনিয়োগকারীর স্বার্থকে প্রাধ্যান্য দিয়ে শেয়ারবাজার আইন-কানুন প্রণয়ন করা হচ্ছে। বিনিয়োগকারীর জমানো মূলধন কেউ যেন খেয়ে ফেলতে না পারে, সে বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। আস্তে আস্তে আস্থা বাড়ছে। সবার অংশগ্রহণে শেয়ারবাজারকে অনেক ওপরে নিয়ে যেতে চাই। সুশাসন প্রতিষ্ঠার আশ্বাস পাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ফিরছেন। একটি স্থিতিশীল শেয়ারবাজার গড়তে জোর দেওয়া হচ্ছে।’
স্টকমার্কেটবিডি.কম/