বাজেট থেকে মূলধন জোগান দিয়েও সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এসব ব্যাংকে দুর্নীতি-অনিয়মের কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে মূলধনে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে সরকারি খাতের পাঁচ ব্যাংক ও বেসরকারি দুই ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। এতে করে ব্যবসার পরিবর্তে এখন মূলধন জোগান নিয়েই ব্যস্ত এসব ব্যাংক। ব্যাংক সাতটি হলো সোনালী, রূপালী, বেসিক, কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন, বাংলাদেশ কমার্স ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।
জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে ১০ শতাংশ ন্যূনতম মূলধনের পাশাপাশি দশমিক ৬২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত মূলধন সংরক্ষণ (ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফার) করতে হয়। গত জুন শেষে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে সাত ব্যাংক। এ ছাড়া ব্যাংক খাতে মূলধন সংরক্ষণের হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন শেষে সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। ওই সময়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ১১ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। ঋণের বিপরীতে চাহিদা অনুযায়ী সঞ্চিতিও রাখতে পারেনি ব্যাংকটি। ফলে সঞ্চিতি ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। হল-মার্ক গ্রুপের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির পর থেকেই আর্থিক সংকটে পড়েছে ব্যাংকটি। সরকার মূলধন জোগান দিলেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।
জুন শেষে রূপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭৪০ কোটি টাকা। ওই সময়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা ও সঞ্চিতি ঘাটতি ১ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা।
একই সময়ে বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৭ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা ও সঞ্চিতি ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৮০ কোটি টাকা। ব্যাংকটিতে ২০১২-১৩ সালে বড় ধরনের অনিয়মের পর থেকে এভাবে চলছে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৭১০ কোটি টাকা। জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ২০২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩১২ কোটি টাকা। এ সময়ে খেলাপি ঋণ ছিল ৫৯৭ কোটি টাকা ও সঞ্চিতি ঘাটতি ছিল ২৬৯ কোটি টাকা।
একই সময়ে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। ওই সময়ে খেলাপি ঋণ ছিল ৭০৭ কোটি টাকা।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, যাচাই-বাছাই না করে দেওয়া ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ছে। নিয়মবহির্ভূতভাবে দেওয়া ঋণও আদায় করা যাচ্ছে না। ফলে এসব ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। মুনাফা না হওয়ায় অনেকে সঞ্চিতিও রাখতে পারেনি। এতেই টান পড়ছে মূলধনে।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এমএ