২০১৬ সালের শুরুতে ঢিলেঢালাভাবেই চলেছে দেশের শেয়ারবাজার। বছরের শেষ দিকে চাঙ্গা হয়েছে শেয়ারবাজার। ২০০ কোটি থেকে ৩০০ কোটির দৈনিক লেনদেন ছাড়িয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। দুই বছরের রেকর্ড ভেঙে মূল্যসূচক পাঁচ হাজার পয়েন্টের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বেড়েছে বাজার মূলধনও।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছে, বছরের শুরুতে শেয়ারবাজার অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে চললেও শেষ দিকে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। বাজার লেনদেন ও কম্পানির শেয়ার দাম বৃদ্ধিতে সক্রিয় হয়েছে পুরনো বিনিয়োগকারীরা। অনেকটা ইতিবাচক ধারাতেই স্থিতিশীলতার পথে শেয়ারবাজার। আশা জাগানিয়া এই শেয়ারবাজার নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বিনিয়োগকারীরাও সন্তুষ্ট।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, নতুন বছরের শুরুতে সূচক ও লেনদেন কিছুটা উন্নতি থাকলেও পরবর্তী ছয় মাস অবনতি হয়েছে। চলতি বছরের ২১ জুলাই পর্যন্ত বাজারে ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় ঘনিয়ে আসায় ধারবাহিকভাবেই কমছিল সূচক। অতিরিক্ত বিনিয়োগে থাকা ব্যাংকগুলো শেয়ার বিক্রি করে সীমার মধ্যে আসায় বাজারে পতন হচ্ছিল। আতঙ্কিত হয়ে ‘আস্থাহীনতায়’ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দূরে সরছিল। শেয়ার বিক্রি না করেই অতিরিক্ত বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত সহায়তা পতন থেকে বছর শেষে চমকে ফিরেছে বাজার। লেনদেন ও মূল্যসূচকের ক্রমাগত উন্নতি হয়েছে। বেড়েছে বাজার মূলধনও।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছে, ২০১০ সালে বাজারে পতনের পর নানামুখী সংস্কারে স্থিতিশীলতার দিকে ফিরছে বাজার। দৈনিক লেনদেন ও মূল্যসূচকও বেড়েছে। বাজার স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাওয়ায় বিদেশি লেনদেনও বেড়েছে। বিনিয়োগকারীও নতুন করে আশা দেখতে শুরু করেছে। তবে শেষ দিকে বাজারের উন্নতি হলেও ‘নিম্নতর’ কিছু কম্পানির শেয়ার দাম বৃদ্ধিতে শঙ্কাও করছে কেউ কেউ।
ডিএসইর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ বছর সব সূচকেই উন্নতি করেছে শেয়ারবাজার। বেড়েছে লেনদেন। বাজার মূলধনেও উন্নতি হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম কার্যদিবস অর্থাৎ ১ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছিল ৩৬৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আর মূল্যসূচক ছিল চার হাজার ৬২৪ পয়েন্ট। ৩৬৫ দিনের বছরে এবার লেনদেন হয়েছে ২৪০ দিন। বছরের শেষ দিনে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৭০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আর মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৬ পয়েন্ট। সেই হিসাবে এক বছরে মূল্যসূচক বেড়েছে ৪১২ পয়েন্ট।
নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত : এ বছর ১১টি কম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। ১১টি কম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড আইপিওর মাধ্যমে সংগ্রহ করেছে প্রায় সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা। এই অর্থের মধ্যে আটটি কোম্পানি ৬৫৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা আর তিনটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ১৯০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। অন্য তিন কোম্পানি সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, জিপিএইচ ইস্পাত এবং বাংলাদেশ থাই অ্যালুমিনিয়াম রাইট শেয়ার ইস্যু করে ৩৬৬ কোটি টাকা উত্তোলন করে। শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করলেও এখনো তালিকাভুক্ত হতে পারেনি প্যাসিফিক ডেনিমস ও দুটি ফান্ড।
বাজার মূলধন বেড়েছে ২৫ হাজার কোটি : চলতি বছরের প্রথম কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ১৫ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। বছরের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৪১ হাজার ২৬১ কোটি ২১ লাখ টাকা। সেই হিসাবে বাজার মূলধন বেড়েছে ২৫ হাজার ৪১২ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
বেড়েছে বিদেশি লেনদেনও : বাজার মূলধন বাড়ার আরো একটি কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ সক্রিয় থাকা। চলতি বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার লেনদেন বেড়েছে। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ডিএসইতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সাত হাজার ৭৯৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন করেছে। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ছয় হাজার ৭৭২ কোটি ২১ লাখ টাকা। সেই হিসাবে আগের বছরের তুলনায় এক হাজার ২৫ কোটি ৯ লাখ টাকা বা ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
বাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, এই শেয়ারবাজার নতুন করে বিনিয়োগে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তবে শঙ্কাও রয়েছে। বিশেষ করে ভালো কম্পানির চেয়ে অপেক্ষাকৃত নিম্নতর কম্পানির শেয়ারের দাম তরতর করে বেড়েছে। ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম না বেড়ে নিম্নতম কম্পানির শেয়ারের দাম বাড়লে বাজারে শঙ্কার সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে শুরুর চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে বর্তমান বাজার।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এমএস