নিজস্ব প্রতিবেদক :
শেয়ারবাজারে কারসাজি নতুন কোনো বিষয় নয়। সবসময়ই স্বল্পমূলধনী কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে নামে চক্রগুলো। কারসাজির কারণে কোনো কারণ ছাড়াই কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ার দর বেড়ে যায়। কারসাজি বন্ধে স্বল্প সময়ে কঠোর পদক্ষেপের অভাবে সবসময়ই ফায়দা লোটে সুবিধাভোগীরা। অন্যদিকে, কারসাজির জালে আটকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
তথানুসন্ধানে জানা গেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার জের ধরে গত কয়েক দিন ধরেই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ও সূচকে নিম্নমুখী ধারা লক্ষণীয়। সূচকের নিম্নগতি দিয়েই শেষ হয় দিনের লেনদেন। এতে বিনিয়োগকারীদের মনে সংশয় তৈরি হচ্ছে, কমছে তাদের অংশগ্রহণও। এমন অবস্থার মধ্যেই গত দুই কার্যদিবসে তালিকাভুক্ত স্বল্পমূলধনী কিছু কোম্পানির শেয়ার দর দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই হু হু করে বাড়ছে। তবে গত কয়েক দিন ধরেই বাড়ছে স্বল্পমূলধনী কোম্পানির শেয়ার দর।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন ধরেই সার্কিট ব্রেকারের কাছাকাছি অবস্থান করছিল স্বল্পমূলধনী কোম্পানি দুলামিয়া কটন। বৃহস্পতিবার বস্ত্র খাতের কোম্পানিটির শেয়ার দর ৯.০৯ শতাংশ বা ০.৯ টাকা বেড়েছে। এদিন কোম্পানিটির ১ লাখ ৮২ হাজার ৬০০ শেয়ার ১৩০ বার হাতবদল হয়, যার বাজার মূল্য ১৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা। গত ৪ বছর ধরে এ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ড বঞ্চিত। ঋণের ভারে নুয়ে পড়া এই কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে।
এদিন সেবা ও আবাসন খাতের শমরিতা হাসপাতালের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৭৩ শতাংশ বা ৮.০৬ টাকা। গতকাল কোম্পানির শেয়ার দর ৯০.২ টাকা থেকে ৯৭.২ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। কোম্পানির ৩ লাখ ৩৬ হাজার শেয়ার ৩৭৭ বার হাত বদল হয়, যার বাজার মূল্য ৩ কোটি ২৪ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টাকা। স্বল্প মূলধনের এই কোম্পানির পিই রেশিও ঝুঁকিপূর্ণ (৪৩.৯১ ) অবস্থানে রয়েছে।
তথ্যানুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে ডিএসইর সার্কিট ব্রেকার সীমায় থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্বল্পমূলধনী কোম্পানির দৌরাত্ম্যই বেশি যেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বাজারে কারসাজি ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। তারপরও স্বল্পমূলধনী কোম্পানির দৌরাত্ম্য কমছে না। এর আগের কার্যদিবসেও ঢাকা স্টক একচেঞ্জে (ডিএসই) দুটি কোম্পানি সার্কিট ব্রেকার স্পর্শ করেছিল। এ ছাড়া সার্কিট ব্রেকারের কাছাকাছি ছিল আরো ১১টি কোম্পানি। আগের কার্যদিবসে ‘জেড’ ক্যাটাগরির দুলামিয়া কটনের শেয়ার দর ১০ শতাংশ বা ০.৯০ টাকা বেড়েছিল। এ ছাড়া খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের রহিমা ফুডের শেয়ার দর ৯.৮২ শতাংশ বা ৪.৩০ টাকা, বস্ত্রখাতের সোনারগাঁও টেক্সটাইলের শেয়ার দর ৯.৩৫ শতাংশ বা ১ টাকা, প্রকৌশল খাতের আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ার দর ৯.৭৬ শতাংশ বা ২.৮ টাকা, প্রকৌশল খাতের বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের শেয়ার দর ৯.৭৬ শতাংশ বা ৩.৭০ টাকা, বিবিধ খাতের সাভার রিফেক্ট্ররিজের শেয়ার দর ৯.৯৬ শতাংশ বা ৫.১ টাকা বেড়েছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কারসাজির কারণে স্বল্পমূলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর কারণ ছাড়াই বাড়ছে। এতে বাজারে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা স্বল্পমূলধনী কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে শেয়ার দর বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখা উচিত। সেইসঙ্গে কারসাজির নেপথ্যের নায়কদের খুঁজে বের করার পক্ষেও মত দিয়েছেন তারা।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম/এলকে