নিজস্ব প্রতিবেদক :
ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন (মালিকানা থেকে প্রশাসন পৃথকীকরণ) পরবর্তী প্রথম বছরেই ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্চের (ডিএসই) আয়ে। সর্বশেষ বছরে (২০১৩-১৪) প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন আয় বেড়েছে সাড়ে ৯ কোটি টাকার উপরে। আর নিট মুনাফা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা। অথচ এর আগের তিন বছর টানা আয় কমে ডিএসইর।
সর্বশেষ হিসাব বছর (২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত) শেষে ডিএসইর পরিচালন আয় হয়েছে ৭৩ কোটি ৭ লাখ ১৮ হাজার টাকা। যা আগের বছর (২০১২-১৩) ছিলো ৬৩ কোটি ৫০ ৬৯ হাজার টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে এ আয়ের পরিমাণ ছিলো ৭৮ কোটি ৫০ লাখ ২৮ হাজার টাকা। আর ২০১০-১১ অর্থবছরে ছিলো ১৭৪ কোটি ৬০ লাখ ১৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ ২০১০-১১ অর্থবছরের পর থেকে আগের বছরের তুলনায় ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকা ডিএসইর আয় তিন বছর পর ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
ডিএসইর আয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৩-১৪ হিসাব বছরে ডিএসইর মোট আয় হয়েছে ১৯২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এর বিপরীতে পরিচালন ব্যয় হয়েছে ৫৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। মোট আয় থেকে সার্বিক ব্যয় বাদ দিয়ে নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১৩৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এতে ডিএসইর শেয়ার প্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৭৪ পয়সা।
আগের বছর ডিএসইর মোট আয় ছিলো ১৭১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে পরিচালন ব্যয় হয় ৫৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। মোট আয় থেকে সার্বিক ব্যয় বাদ দিয়ে নিট মুনাফা দাঁড়ায় ১১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এতে শেয়ার প্রতি আয় হয় ৬৪ পয়সা।
বরাবরের মতো ২০১৩-১৪ হিসাব বছরে ডিএসইর মোট আয়ের সিংহভাগ এসেছে সুদ আয় থেকে। এ খাতে আয় হয়েছে ১১৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। যা ২০১২-১৩ সময়ে ছিলো ১০৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
সর্বশেষ বছরে আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে সদস্যদের চাঁদা, তথ্য বিক্রয়, ওটিসি মার্কেট, লাগা ও হাওলা চার্জ থেকে আয়। লাগা চার্জ ৩৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। হাওলা চার্জ ৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
সদস্যদের চাঁদা থেকে আয় ১১ লাখ ৩৭ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। তথ্য বিক্রয় আয় ৩২ লাখ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫১ লাখ টাকা। আর ওটিসি মার্কেট থেকে আয় ৮ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার টাকা।
আয়ের অন্য খাতগুলোর মধ্যে তালিকাভুক্তির আয় আগের বছরের ১১ কোটি ২৮ লাখ টাকার তুলনায় কিছুটা কমে হয়েছে ১১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ট্রেকহোল্ডার (নতুন সদস্য) প্রবেশ ফি ৯০ লাখ থেকে কমে হয়েছে ৮০ লাখ। লেনদেন বহির্ভূত আয় ১ কোটি ৯ লাখ থেকে কমে হয়েছে ৩৮ লাখ টাকা। টিভি থেকে সাবস্ক্রিপশন আয় ৭২ লাখ টাকা থেকে কমে হয়েছে ২৮ লাখ টাকা।
লভ্যাংশ আয় ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা থেকে কমে হয়েছে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ডিপি আয় ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা থেকে কমে হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ভাড়া বাবদ আয় আগের বছরের মতো ১৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকায় রয়েছে।
ট্রেডিং ওয়ার্ক স্টেশন চার্জ থেকে আয় হয়েছে ৩২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। আগের বছর এ খাতে কী পরিমাণ আয় হয়েছিলো তার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আর বিবিধ খাতের আয় ১ কোটি ২২ লাখ থেকে কমে হয়েছে ৫৫ লাখ টাকা।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ডিএসইর পর্ষদ সভার অনুমোদন নিয়ে ২০১৩-১৪ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ না দেওয়ারও বিষয়টিও অনুমোদন দিয়েছে পর্ষদ। যা আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি বার্ষিক সধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। ওই দিন সন্ধ্যায় একটি পাঁচতারা হোটেলে এজিএমটি অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র জানায়, ডিএসইর বছর হিসাব করা হয় অর্থবছর ধরে। অর্থাৎ এক বছরের জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের জুন মাস শেষে ডিএসইর আয় ব্যয় হিসাব করা হয়।
আগের বছরের তুলনায় মুনাফা বৃদ্ধি পাওয়াকে ইতিবাচক উল্লেখ করে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার মূল্যকে আকর্ষণীয় করতে রিজার্ভ বড় রাখা প্রয়োজন। এ জন্য ডিএসইর আর্থিক ভিত আরও শক্তিশালী করতে হবে। এটি করা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে শেয়ারহোল্ডাররা অনেক বেশি লাভবান হবেন।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম/এলকে