নিজস্ব প্রতিবেদক :
শেয়ারবাজার যখনই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই সক্রিয় হয়ে উঠেছে গেম্বলাররা। এই চক্রের থাবায় রয়েছে দূর্বল মৌলভিত্তি ও স্বল্প মূলধনী সম্পন্ন অর্ধ শতাধিক কোম্পানি।
চক্রটি কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা, আর্থিক প্রতিবেদন এবং কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের সংবেদনশীল তথ্য মোবাইল ফোন ও ফেসবুকে ছড়িয়ে কয়েকগুণ দাম বাড়িয়ে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অতিলোভে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে আবারো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে শেয়ারবাজার। এ অবস্থায় নতুন করে বিনিয়োগের আগে কোম্পানি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে বিনিয়োগ করা উচিৎ। তা না হলে বিনিয়োগকারীদের আরেক দফা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে।
আর বিনিয়োগকারীদের উচিত কোম্পানির ইপিএস ও পিই রেশিও দেখে ভালভাবে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই করে বিনিয়োগ করা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে কিছু স্বল্পমূলধনী ও দুর্বল মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। মূলত স্টক এক্সচেঞ্জ ও বিএসইসির দায়িত্বহীনতার কারণে ব্যবসা করে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, সম্প্রতি কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। কোম্পানিগুলোর প্রকৃত কারণ জানতে এরই মধ্যে কিছু কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাকি কোম্পানিগুলোর বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বিএসইসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি দুর্বল মৌলভিত্তি ও স্বল্প মূলধনী যে সব কোম্পানি অতিমূল্যায়িত হয়েছে। সেগুলো হলো – আলহাজ টেক্স, বীচ হ্যাচারি, লিবরা ইনফিউশন্স, রহিমা ফুড, মুন্নু সিরামিক, জুট স্পিনার্স লিমিটেড, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, জাহিন টেক্সটাইল, জাহিন স্পিনিং, মুন্নু জুট স্টাফলার, এটলাস বাংলাদেশ, সমতা লেদার, শ্যামপুর সুগার, ঝিলবাংলা সুগার মিলস লিমিটেড, কোহিনূর কেমিক্যালস, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, নর্দার্ন জুট, জেমিনি সি ফুড, ফার কেমিক্যালস, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, বিডি ওয়েল্ডিং, রেনউইক যজ্ঞেস্বর, ইমাম বাটন, দুলামিয়া কটন, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, আরামিট লিমিটেড, আজিজ পাইপস, বঙ্গজ, বিডি অটোকার, বিডি সার্ভিসেস, বার্জার পেইন্টস, দেশ গার্মেন্টস, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, ইস্টার্ন কেবল, ফার কেমিক্যাল, ফারইস্ট লাইফ, ফাইন ফুডস, গোল্ডেন হার্ভেস্ট, ইনটেক অনলাইন, ইনফর্মেশন সার্ভিসেস লিমিটেড, জুট স্পিনার্স, মডার্ন ডায়িং, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, নর্দান জুট, ন্যাশনাল টি, ন্যাশনাল টিউবস, স্যালভো কেমিক্যাল, সাভার রিফ্রাক্টরিজ, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, সিঙ্গার বিডি ও সোনালী আঁশের শেয়ার।
সম্প্রতি স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকসের শেয়ারের দর তিন দিনের ব্যবধানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকার উপরে। গত ২৪ আগষ্ট কোম্পানিটির শেয়ার ৪৩ টাকায় সর্বশেষ লেনদেন হয়। যা গত বৃহস্পতিবার ২৭ আগষ্ট প্রায় ৭ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকা। এর আগে গত জুলাই মাসে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকসের শেয়ারের দর হঠাৎ করেই বৃদ্দি পায়। টানা ৬ দিন শেয়ারটির দর একই গতিতে বাড়তে থাকে। এসময় শেয়ারটির দর ৩৫ টাকা থেকে ৫৫ টাকা দাঁড়ায়।
অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়ার পেছনে কোম্পানির কাছে কোনো সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে কিনা তা জানতে সব কোম্পানিকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ। কোম্পানিগুলো তাদের জবাবে ‘দাম বাড়ার কারণ জানা নেই’ বলে জানিয়েছে।
তবে সম্প্রতি ১৩ কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি। চলতি মাসে ১৩ কোম্পানির অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়ার পেছনে কারসাজি হচ্ছে বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সার্ভিল্যান্স বিভাগ। কোম্পানিগুলো হলো জেমিনি সি ফুড, জাহিন স্পিনিং, ফার কেমিক্যাল, জাহিন টেক্সটাইল, আলহাজ টেক্সটাইল, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, বিডি ওয়েল্ডিং, রেনউইক যজ্ঞেস্বর, কাশেম ড্রাইসেল, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বিচ হ্যাচারি এবং মুন্নু জুট স্টাফলার এবং অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এইচ