স্টকমার্কেট ডেস্ক:
কাঁচামাল আমদানি ও অন্যান্য শিল্প উপকরণসহ ব্যবস্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বস্ত্রখাতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। অন্যদিকে উৎপাদিত পণ্যের দাম কমে যাওয়া, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগী দেশগুলোর পণ্যের অবাধ প্রবেশ, অসম প্রতিযোগিতা, দেশে-বিদেশে নেতিবাচক প্রচারণা ও দুর্ঘটনা-শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বাজারের পরিধি কমছে। এসব কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্রখাতের ৪৫ কোম্পানির মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ কোম্পানির মুনাফার ধারা এখন নিম্নমুখী। এগুলোর মধ্যে লোকসানে পড়েছে দুটি কোম্পানি।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সালে আলহাজ্ব টেক্সটাইলের কর-পরবর্তী মুনাফা দুই কোটি ৭৮ লাখ টাকা ছিল, যা সর্বশেষ ২০১৫ সালে দুই কোটি সাত লাখ টাকায় নেমেছে। লোকসান থেকে বেরিয়ে আসা কোম্পানি অলটেক্সের মুনাফা এক বছরেই প্রায় অর্ধেক কমেছে। ২০১৪ সালে ১২ কোটি ২৬ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল, যা ২০১৫ সালে ছয় কোটি ৪৪ লাখ টাকায় নেমেছে।
ফ্যামিলিটেক্সের কর-পরবর্তী মুনাফা ২০১৩ সালে ৯২ কোটি ১৮ লাখ টাকা ছিল, যা ২০১৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৯১ কোটি ১৯ লাখ টাকায়।
একইভাবে এইচ আর টেক্সটাইল ২০১৩ সালে পাঁচ কোটি ৮৩ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল, যা ২০১৫ সালে প্রায় অর্ধেক কমে তিন কোটি আট লাখ টাকায় নেমেছে।
গ্রুপভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ম্যাকসন্স ও সায়হাম গ্রুপের দুটি করে কোম্পানির মুনাফার ধারা নিম্নমুখী। ম্যাকসন্স গ্রুপের মেট্রো স্পিনিংয়ের কর-পরবর্তী মুনাফা ২০১৩ সালে তিন কোটি ২৩ লাখ টাকা ছিল, যা ২০১৫ সালে কমে দুই কোটি ১৮ লাখ টাকায় নেমেছে। গ্রুপের অপর কোম্পানি ম্যাকসন্স স্পিনিংয়ের অবস্থাও ক্রমাবনতির দিকে। ২০১৩ সালে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ১৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যা ২০১৫ সালে ছয় কোটি ২৫ লাখ টাকায় নেমেছে।
একইভাবে সায়হাম গ্রুপের দুটি কোম্পানির মুনাফাও কমেছে। এর মধ্যে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে সায়হাম টেক্সটাইলের মুনাফা সাত কোটি ৮৯ লাখ টাকা কমেছে। এছাড়া ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে সায়হাম কটনের কর-পরবর্তী মুনাফা ছয় কোটি ৯৩ লাখ টাকা কমেছে।
এছাড়া তিন বছরে প্রাইম টেক্সটাইলের মুনাফা পাঁচ কোটি পাঁচ লাখ টাকা কমেছে। কোম্পানিটি ২০১৩ সালে চার কোটি ৬২ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল, যা ২০১৫ সালে চার কোটি ১১ লাখ টাকায় নেমেছে।
স্বল্প মূলধনি কোম্পানি মিথুন নিটিংয়ের মুনাফা ২০১২ সালের পর থেকে কমছে। ওই বছর কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল পাঁচ কোটি নয় লাখ টাকা, যা প্রায় ৫৭ লাখ টাকা কমে ২০১৫ সালে চার কোটি ৪৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
আর তাল্লু স্পিনিং ২০১৩ সালে ১২ কোটি ৯০ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল, যা ২০১৫ সালে এক কোটি তিন লাখ টাকায় নেমেছে।
স্কয়ার টেক্সটাইল ২০১২ সালে ৮২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল, যা ২০১৪ সালে ৮০ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় নেমেছে।
উৎপাদন চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে ফিরে আসার পরও উৎপাদন চালু করতে পারেনি মডার্ন ডাইং। কারখানা ও অবকাঠামো ভাড়া দিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে কোম্পানিটি। ২০১৪ সালে মডার্ন ডায়িংয়ের কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ২১ লাখ ৪০ হাজার টাকা, যা ২০১৫ সালে ১৫ লাখ ৯০ হাজার টাকায় নেমেছে।
তালিকাভুক্তির পর কমতে শুরু করেছে তিনটি কোম্পানির মুনাফা। মাহিন গ্রুপের কোম্পানি হামিদ ফেব্রিক্সের মুনাফা। ২০১৪ সালে ২৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল কোম্পানিটি, যা ২০১৫ সালে প্রায় অর্ধেক কমে ১৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এদিকে ২০১৩ সালে হা-ওয়েল টেক্সটাইলের কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তালিকাভুক্তির পর ২০১৫ সালে ১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকায় নেমেছে।
২০১৫ সালে তালিকাভুক্ত অপর কোম্পানি রিজেন্ট টেক্সটাইল ২০১৩ সালে ১৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল, যা দুই কোটি ৬১ লাখ টাকা কমে ২০১৪ সালে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এদিকে লোকসানে রয়েছে বস্ত্রখাতের দুটি কোম্পানি। এরমধ্যে ২০১১ সাল থেকে লোকসানে মাল্টিমোড গ্রুপের দুলামিয়া কটন। ২০১১ সালে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী লোকসান এক কোটি ৫১ লাখ টাকা ছিল, যা ২০১৫ সালে বেড়ে এক কোটি ৮৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে দু’বছর ধরে লোকসানে রয়েছে সোনারগাঁও টেক্সটাইল। ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী লোকসান তিন কোটি ৫৯ লাখ টাকা বেড়েছে। এর আগে ২০১২ সালে সর্বশেষ ৭১ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল কোম্পানিটি।
এসব শিল্পের মালিকরা বলছেন, ‘রানাপ্লাজা ট্র্যাজেডির পর অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্সসহ বিদেশি ক্রেতাদের দেওয়া শর্ত পালন করতে হচ্ছে। এ কারণে চাপের মুখে পড়ছে কোম্পানিগুলো। এছাড়া উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির বিপরীতে বাজার সঙ্কুচিত হয়ে পড়ায় বস্ত্রখাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে কোম্পানিগুলো।’
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এমআর