স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :
দেশের শেয়ারবাজারে আবারও চরম আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই কমছে সূচক ও শেয়ারের দাম। নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। নির্বাচন সামনে রেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল বছরটিতে শেয়ারবাজার ভালো যাবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে উল্টো।
অব্যাহত দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীর মধ্যে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের বাজারধসের আতঙ্ক আবারও ভর করছে। শেয়ারবাজারের এ দুটি বড় কেলেঙ্কারির ঘটনাই ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শাসনামলে।
কয়েক দিনে বাজারের একাধিক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ একেবারেই কমে গেছে। অনেক ব্যাংক তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিয়ে অন্যত্র খাটাচ্ছে। ব্যাংক খাতে হঠাৎ করে আমানতের সুদ হার বেড়ে যাওয়ায় অনেকে শেয়ারবাজারের পরিবর্তে ব্যাংকে টাকা লগ্নি করছেন।
শেয়ারবাজারের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক দরপতনে সবচেয়ে বেশি কমছে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের শেয়ারের দাম। গতকালও ব্যাংক খাতের লেনদেন হওয়া প্রতিটি শেয়ারের দাম গড়ে ২ শতাংশ এবং আর্থিক খাতের প্রতিটি শেয়ারের দাম গড়ে সোয়া ২ শতাংশের মতো কমেছে। সাধারণত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতেই এসব কোম্পানির শেয়ার বেশি থাকে।
এদিকে ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুকে কেন্দ্র করে মতিঝিলের শেয়ারবাজারে পাড়ায় বেশ কিছু দিন ধরে নানা গুঞ্জন ভেসে বেড়াচ্ছে। চীন ও ভারতের আলাদা দুটি জোট ডিএসইর শেয়ার কিনতে আগ্রহী। চীনের জোটের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে এককাট্টা ডিএসইর সদস্যরা। বাজারে গুঞ্জন রয়েছে, যদি চীনের প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার বিক্রির অনুমোদন দেওয়া না হয়, তবে বাজারে তার বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমন এক পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি চীনের প্রস্তাবের আইনি দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। প্রস্তাবটি সংশোধন করে অনুমোদনের জন্য পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
গত জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে বাজারে পতন শুরু হয়। তাতে গত তিন মাসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে প্রায় ৭৬২ পয়েন্ট। এর মধ্যে ১ মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত মাত্র ১৭ কার্যদিবসে কমেছে প্রায় ৩৭৯ পয়েন্ট।
চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানোর ঘোষণার পর থেকেই মূলত শেয়ারবাজারে দরপতন শুরু হয়। চাপে পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এডিআর সমন্বয়ের সময় বাড়ালেও শেয়ারবাজারের পতন থামেনি।
বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী মনে করেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকি দুর্বলতার কারণেই বাজারে নানাভাবে কারসাজির ঘটনা ঘটে। দেখা যায়, যেদিন বাজারে বিএসইসির তদারকি শক্তিশালী থাকে, সেদিন খুব বেশি সূচক কমে না। একাধিক বিনিয়োগকারী বলেছেন, বাজারে যদি সংকটই থাকবে তাহলে মাঝেমধ্যে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটে কীভাবে? আসলে একটি গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাজারকে নানাভাবে ব্যবহার করছে। আর তাতে বারবার নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এমএম