স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :
প্রচলিত ব্যাংকিং সিস্টেমে বর্তমানে ঋণের সুদহার দুই অঙ্কের ওপরে। শেয়ারবাজারের সহায়তায় ৪ শতাংশ সরল সুদে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) ৮৫৬ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। আগামী তিন বছর আবর্তনশীল প্রক্রিয়ায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই অর্থ ছাড় করে আইসিবিকে দিয়েছে।
বাজারের অবস্থা ক্রমাগত নিম্নমুখী হলেও তহবিল সংকটের কথা তুলে সরকারের কাছে অর্থ সহায়তা চায় আইসিবি। ২০১০ সালে ধসে পড়া ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীর জন্য গঠিত বিশেষ সহায়তা তহবিলের স্থিতি স্বল্প সুদে দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় আইসিবি। এই চিঠির পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংকও আইসিবিকে অর্থ দিতে রাজি হয়। ওই দিনই তড়িঘড়ি করে অর্থ মন্ত্রণালয় সার্কুলার জারি করা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়কে লেখা চিঠিতে আইসিবি জানায়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ২০১০-২০১১ সালে বড় ধরনের উত্থান-পতন ঘটে। ২০০৯ সালের ১ জুন থেকে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সূচক বাড়ে ২৫৩ শতাংশ অর্থাৎ দুই হাজার ৫২৫ পয়েন্ট থেকে বেড়ে ৮ হাজার ৯১৮ পয়েন্ট দাঁড়ায়। কিন্তু পরবর্তীতে টানা পতনে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীর সহায়তায় ২০১৩ সালের ৪ জুলাই পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তা তহবিল নামে ৯০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়। যার তদারকিতে থাকে বিশেষ প্রণোদনা স্কিমের আওতায় ৯০০ কোটি টাকার ফান্ড, যা ৩ কিস্তিতে ৩০০ কোটি টাকা করে আইসিবির হিসাবে দেওয়া হয়। প্রথম দফায় এই ফান্ডের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০১৬ সাল পর্যন্ত। কিন্তু বাজারে আশানুরূপ সাড়া না পেলে কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। এই ফান্ডটির মেয়াদ চলতি ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা।
আইসিবি সূত্রে জানা যায়, ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীকে ঋণ দেওয়া হয়। এতে ৪৮টি মার্চেন্ট ও ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে ৩৯ হাজার ১৭৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী অর্থ সুবিধা পায়। যার মধ্যে ২০১৯ সালে ৩১ মার্চ পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৮১৫ কোটি ৬ লাখ টাকা। তবে স্কিমের তহবিল সংরক্ষণে ব্যাংক হিসাবে এসএনডি হিসাবে অর্জিত সুদসহ অর্থ দাঁড়ায় ৮৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা, যা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখা হয়।
সূত্র জানায়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য এই অর্থ দিতে প্রজ্ঞাপন জারির পর তদারকি কমিটি বৈঠক করেছে। পুঁজিবাজার সহায়তা তহবিলে ৮৫৬ কোটি টাকার মধ্যে আইসিবি পাবে ৭৬০ কোটি টাকা, যা তারা সরাসরি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে।
সূত্র জানায়, সহায়তা তহবিলে মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি কয়েক দফা সুদের হারও কমানো হয়। প্রাথমিকভাবে সুদের হার নির্ধারণ করা হয় ৯ শতাংশ। যার মধ্যে সরকার ৫ শতাংশ, সার্ভিস চার্জ বাবদ আইসিবি ২ শতাংশ এবং মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ব্রোকার ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এই হারে সুদের বিনিয়োগকারীর তেমন কোনো সাড়া না পাওয়ায় সেটা ৩ শতাংশ কমিয়ে ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষার্থে প্রণোদনা স্কিমের আওতায় ঋণের সুদ ও আসল শেয়ারবাজারে পুনর্ব্যবহারে গত ২ মে অনুমতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ বিভাগের সম্মতিক্রমে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই তহবিলের মেয়াদ ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হলো। এ ছাড়া এই স্কিমের যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, তা পরিশোধের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও ফান্ড তদারকি কমিটির আহ্বায়ক সাইফুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দিতে সরকার ৪ শতাংশ সুদেই এই অর্থ দিচ্ছে, যা আগামী ২০২৩ সালের মাঝ পর্যন্ত আবর্তনশীল আকারে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে। ৮৫৬ কোটি টাকার মধ্যে ৭৬০ কোটি টাকার আইসিবি নিজেই সরাসরি বিনিয়োগ করবে। আর বাকি ৯৬ কোটি টাকা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর চাহিদাভিত্তিতে দেওয়া হবে।’
স্টকমার্কেটবিডি.কম/বি/জেড