স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :
ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃতফসিল নীতিমালার যে সার্কুলার জারি করেছিল, সেটা অবশেষে কার্যকর হচ্ছে। সার্কুলার অনুযায়ী খেলাপিরা ঋণ পরিশোধে টানা ১০ বছর সময় পাবেন। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সার্কুলারটি পরিপালন করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনার ফলে আগামী দুই মাস ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা নিতে পারবেন ঋণখেলাপিরা। তবে এই দুই মাস নতুন করে কোনও ঋণ পাবেন না তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ঋণখেলাপিরা মাত্র দুই শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন। পুনঃতফসিল হওয়া ঋণ পরিশোধে তারা সময় পাবেন টানা ১০ বছর। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরাও এই সুযোগ পাবেন। শুধু তাই নয়, এই ধরনের ঋণখেলাপিদের প্রথম এক বছর কোনও কিস্তিও দিতে হবে না। আর চিহ্নিত এই ঋণখেলাপিদের গুনতে হবে ৯ শতাংশেরও কম সুদ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘সরকার ঋণখেলাপিদের পছন্দ করে। এ কারণে তাদের নানাভাবে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংক খাতে ভালো ঋণ এখন ৯ লাখ কোটি টাকার ওপরে। এই ৯ লাখ কোটি টাকা দেওয়া গ্রাহকদের সরকার সুবিধা না দিয়ে মন্দ ঋণের এক লাখ কোটি টাকার গ্রাহকদের বেশি মদত দিচ্ছে।’
খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করেছে। তাতে প্রকৃত ঋণখেলাপিদের খেলাপি বলা যাবে না। আরেক সার্কুলারে ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যত খেলাপি হয়েছেন, তারা সবাই মাত্র ২ শতাংশ টাকা জমা দিয়ে দশ বছরের জন্য নিয়মিত হতে পারবেন।’ তার মতে, ‘যারা নিয়মিত ব্যাংকের টাকা ফেরত দেন, তাদের চেয়ে খেলাপিদের সুযোগ বেশি থাকায় ব্যাংকে খেলাপির পরিমাণ বেড়ে এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।’
এর আগে, গত ১৬ মে খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এই সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করলে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ওই সময় এই সার্কুলারের ওপর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন স্থিতাবস্থা জারি করেন। তবে, গত ৮ জুলাই হাইকোর্ট ডিভিশনের স্থিতাবস্থার ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২ মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলার অবশেষে কার্যকর হচ্ছে।
এদিকে, ১১ জুলাই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো নতুন সার্কুলারে বলা হয়েছে—বিআরপিডি সার্কুলার নং-৫, ১৬ মে ২০১৯-এর ওপর হাইকোর্ট ডিভিশন কর্তৃক জারি করা স্থিতাবস্থার ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত ৮ জুলাই ২ মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। ওই আদেশের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা নিতে হলে আগামী ১৬ আগস্টের মধ্যে খেলাপিদের আবেদন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট ও ৯ শতাংশ সরল সুদে ১০ বছরের জন্য ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিয়ে খেলপি ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ নীতিমালা জারি করা হয়। এতে পুনঃতফসিলের সুবিধা নিতে ৯০ দিনের মধ্যে আবেদন করার সময় নির্ধারণ করা আছে।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম/জেড