‘দেশের অর্থনৈতিক গতি বাড়াতে লজিস্টিক সাপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সড়ক, রেলের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের এরি লজিস্টিক্স সাপোর্ট প্রয়োজন।
রপ্তানি ও বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার সহযোগিতা করছে, কিন্তু এর কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। রপ্তানির ক্ষেত্রে এক মন্ত্রণালয় থেকে অন্য মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ কম হয়, এতে রপ্তানিতে বাধা তৈরি হয়। ’
মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘লজিস্টিক্স ইস্যু অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ ইন ক্রস-বর্ডার অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল সেমিনারে এসব মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
সেমিনারে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে আমাদের নিজেদের ইনডেক্স থাকা দরকার। এর মাধ্যমে বিভিন্ন সহযোগিতা করতে হবে। আমরা নিজেদের শুধু সমালোচনা করি, কিন্তু এর মধ্যে অনেক ইতিবাচক দিক আছে, যেগুলো তুলে ধরা যায়। আমরা আগের তুলনায় এগিয়েছি তা যথেষ্ট নয়। রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কিন্তু সেখানে যে খরচ লাগে ২৯০ ডলার আর আমাদের লাগে ৪শ ডলার। একটি বিষয়ে তাদের খরচ ৩৭৩ ডলার আর আমাদের ৯শ ডলার প্রয়োজন হয়। আবার শিপমেন্টে আমাদের অনেক সময়ের প্রয়োজন যেখানে তারা কম সময়ে করতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের বন্দর বিষয়েও সমস্যা তৈরি হয়। পেট্রোপোল আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর সেখানে এক মাস আগে বেনাপোলের অজুহাতে বন্ধ হলো। সেটার সমাধান পেতে তিন দিন সময় দরকার হয়। আবার রপ্তানির ক্ষেত্রে এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়ে যেতে হয়। সেখানেও সভা যথাসময়ে হয় না। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে আমাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে।
ড. জাইদি সাত্তার বলেন, লজিস্টিক্স পারফর্ম হলে সবার জন্য ভালো। সড়ক ও রেলের কানেক্টিভি বাড়াতে হবে। পলিসি সাপোর্ট পেলে পোশাকশিল্প তৈরি পোশাকের (আরএমজি) মতো আরও অনেক পণ্য রপ্তানি হবে। প্রয়োজনে ইনসেনটিভ দিতে হবে ও রপ্তানি বাড়াতে হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আমাদের শিপটমেন্টের জন্য শিল্প, বাণিজ্য, অর্থ মন্ত্রণালয়ে যেতে হয়। এখানে সময়ের সমন্বয় হয় না। আবার আমাদের পোর্টের সক্ষমতা বেড়েছে তবে, লজিস্টিক্স সাপোর্ট কম। এটা দেখতে হবে। আমাদের এখানে ১০ হাজার ট্রাক আসছে। অথচ কোন ট্রাক টার্মিনাল নেই। ফলে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে আটলেন করতে হবে ও রেলের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, রপ্তানি ও বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার সহযোগিতা করছে। কিন্তু এর কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। রপ্তানির ক্ষেত্রে এক মন্ত্রণালয় থেকে অন্য মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ কম হয়, এতে রপ্তানিতে বাধা তৈরি হয়। পাশাপাশি আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আনতে হবে, কানেক্টিভিটি বাড়াতে হবে। সবাই মিলে দেশের জন্য এক হয়ে কাজ করলে অর্থনেতিক অবস্থান আরও দৃঢ় হবে।
কাস্টমস কর্মকর্তা আকরাম হোসেন বলেন, কাস্টম অটোমেশনে চলে গেছে। আমরা ছাড়পত্র দিলেও কানেক্টিভিটির জন্য সমস্যা তৈরি হয়। একটা রোডের উন্নয়নে তিন বছর লাগে যায়। এসব বিষয়ে আরও ভাবতে হবে।
চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটির সদস্য জাফর আলম বলেন, বন্দরের কাজ শুধু কুলির মতো লাগেজ আনা-নেওয়া করা। এর মধ্যে কি আছে জানতে পারে না, কোনটির গুরুত্ব কি জানা থাকে না। আমরা ওপরের আদেশের অপেক্ষায় থাকি। তবে, পোর্টের সক্ষমতা এখন অনেক বেড়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে ১০ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডেল করা হতো, এখন তা ৩০ লাখে করা হয়। তবে, বন্দর থেকে ট্রাক বের হয়ে অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়া যানজটেও পড়ে হয়। সেটাও সমাধান করতে হবে।
ডিসিসিআইর সভাপতি শামস মাহবুবের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অধ্যাপক সেলিম রায়হান। বক্তব্য রাখেন ড. এম মাসরুর রিয়াজ, সামির সাত্তার, ডিসিসিআইর সহ সভাপতি এন কে এ মবিন প্রমুখ।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/