শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ।
শনিবার অনুষ্ঠিত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট ২০১৫ : ব্যবসায়িক কর্মকান্ডে-এর প্রভাব’ শীর্ষক ওয়েবিনার তিনি এসব কথা বলেন। আয়োজিত এ ওয়েবিনারে বাংলাদেশের মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মোসলেম চৌধুরী প্রধান অতিথি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক-এর পরিচালক আফতাব-উল ইসলাম, এফসিএ সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।
স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, মানসম্মত অডিট রিপোর্ট প্রস্তুতকরন ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেটি দেশের ব্যাংকিংখাতের খেলাপী ঋণ চিহ্নিতকরনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের শেয়ারবাজারে এখনও কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি, এছাড়াও দেশের জিডিপিতে শেয়ারবাজারের অবদান সারা পৃথিবীর অন্যান্য দেশসমূহের মধ্যে সবচেয়ে কম, এ অবস্থা উন্নয়নে লিস্টেট ও নন-লিস্টেট কোম্পানীসমূহের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, বিশেষকরে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষনের জন্য বহুজাতিক কোম্পানীসমূহকে ‘ইন্টারন্যাশনাল একাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস বোর্ড’-এর আওতায় আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসরণ করতে হয় এবং ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন প্রাপ্তি নিশ্চিতকরনের জন্য ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং-এর গাইডলাইন আরো সহজীকরন এবং ব্যবহার বান্ধব করা প্রয়োজন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মোসলেম চৌধুরী বলেন, আমাদের ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিষয়াদির পাশাপাশি জনস্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও বিবেচনা করে থাকে। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে এ কাউন্সিলের কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণ ও দৃশ্যমান করার উপর জোরারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডর্ড (আইআরএফএস)’ অনুসরণের ক্ষেত্রে আমাদের আবশ্যই নিজেদের সক্ষমাকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং আমাদের এসএমই খাত এখনই আইআরএফএস-এর গাইড লাইন অনুসরনের জন্য প্রস্তুত হতে পারেনি, তাই এ বিষয়টি নিয়ে সকলেরই যতœবান হতে হবে।
সম্মানিত অতিথি’র বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংক-এর পরিচালক আফতাব-উল ইসলাম বলেন, ক্যামেল রেটিং-এর মত অডিট কোম্পানীসমূহের জন্য এফআরসি কর্তৃক রেটিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে পারে, যার মাধ্যমে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা, অবস্থান এবং সক্ষমতা সম্পর্কে আমরা ধারণা পেতে পারি। এছাড়াও তিনি অডিট রিপোর্টের বিশ^াসযোগ্যতা বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের ‘ফাইনান্সিয়াল রিপোর্ট মনিটরিং ডিভিশন’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ, এফসিএ, এসিএ।
তিনি বলেন, ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ৩টি বিষয় যেমন: আর্থিক তথ্য বিবরণী, অডিট প্রসেস এবং স্বচ্ছতা নিরূপন ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট-এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, মানসম্মত ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্ট একটি ব্যাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য করে তোলার পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের আতœবিশ^াস বৃদ্ধি এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষনে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তিনি অডিট রিপোর্ট প্রস্তুতকরণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন।
নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের স্ট্যান্ডার্ড সেটিং ডিভিশন-এর নির্বাহী পরিচালক এম আনোয়ারুল করিম, এফসিএ, সিপিএ, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ^বিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. জাভেদ সিদ্দিকী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট-এর আপীল বিভাগের এ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার এ এম মাসুম, দি ইন্সটিটিউট অফ চার্টার্ড একাউন্টেন্টস অফ বাংলাদেশ (আইসিএবি)-এর সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক, এফসিএ এবং দি ইন্সটিটিউট অফ কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্টেন্টস অফ বাংলাদেশ (আইসিএমএবি)-এর সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন আকন, এফসিএমএ যোগদান করেন।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/