স্টকমার্কেটবিডি ডেস্ক:
দেশ থেকে টাকা পাচার শনাক্ত ও বন্ধে আলাদা তদন্ত ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্প্রতি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এখন থেকে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় এ ধরনের ইউনিট গঠন করতে হবে।
এর সদস্যরা মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের ঘটনা নিয়েও কাজ করবে। পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এর আগে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্সের সভায় এ বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। মানি লন্ডারিং আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকেও এ ব্যাপারে ইতিবাচক মত আসে। এছাড়া আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) নীতিমালায়ও দ্রুত ঘটনা শনাক্তে আলাদা তদন্ত ইউনিট গঠনের সুপারিশ করা হয়। এসবের আলোকেই মূলত এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশের ১৭ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে বিএফআইইউতে নিয়মিতভাবে সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট (এসটিআর) ও নগদ লেনদেনের রিপোর্ট (সিটিআর) দাখিল করতে হয়। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইনের আওতায় এ ধরনের রিপোর্ট দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে, সব ধরনের ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানি, মানি চেঞ্জার্স।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিবন্ধন নিয়ে ব্যবসা করে এমন যে কোনো প্রতিষ্ঠান, মানি ট্রান্সফারের কাজে নিয়োজিত যে কোনো প্রতিষ্ঠান, শেয়ারবাজারের স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলারও এর মধ্যে পড়ে। পোর্টফোলিও ম্যানেজার ও মার্চেন্ট ব্যাংকার, সিকিউরিটিজ কস্টোডিয়ান, অ্যাসেট ম্যানেজার, নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন, নন-গভর্মেন্ট অর্গানাইজেশন, সমবায়ী প্রতিষ্ঠান, রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানও আছে।
বিভিন্ন মূল্যবান ধাতু ও পাথরের ডিলার, ট্রাস্ট অ্যান্ড কোম্পানি সার্ভিস প্রোভাইডার, ল’ফার্ম, নোটারি পাবলিক, অন্যান্য পেশাজীবী ও অ্যাকাউন্ট্যান্ট প্রতিষ্ঠানও এর আওতায় পড়ে। এসব প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে বিএফআইইউতে সন্দেনজনক লেনদেন বা নগদ লেনদেনের রিপোর্ট দাখিল করে।
হিসাবের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত বেশি লেনদেন হলে গ্রাহক যদি তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না দিতে পারেন তবে সেগুলো সন্দেহজনক হিসাবে গণ্য হবে। দিনে এক বা একাধিক লেনদেনের মাধ্যমে ১০ লাখ বা তার বেশি অঙ্কের অর্থ নগদ তুললে তা নগদ লেনদেন রিপোর্ট হিসাবে বিএফআইইউকে জানাতে হবে।
আলোচ্য ১৭ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই দেশ থেকে বেশির ভাগ অর্থ বিদেশে পাচার হয় বা মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা ঘটতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাসহ অন্যান্য তদন্ত সংস্থাগুলোতেই আলাদা তদন্ত ইউনিট গঠন করতে হবে।
আলোচ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কেবল বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আলাদা তদন্ত ইউনিট রয়েছে। এর বাইরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ পুলিশ, সিআইডি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরে আলাদা তদন্ত ইউনিট রয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই।
এর মধ্যে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), এনজিওদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনজিওবিষয়ক ব্যুরো, বীমা কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, সমবায় সমিতিগুলোর নিয়ন্ত্রক সমবায় অধিদফতর, কোম্পানি আইনে পরিচালিত কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রক রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে (আরজেএসসি) আলাদা তদন্ত ইউনিট নেই।
এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, জাতীয় ডাকঘরেও আলাদা তদন্ত ইউনিট নেই। এসব সংস্থাকেও মানি লন্ডারিং অপরাধ তদন্ত করার সক্ষমতা অর্জন ও আলাদা তদন্ত ইউনিট গঠন করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনে মানি লন্ডারিং ঘটনা তদন্তের জন্য আলাদা একটি ইউনিট গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তারা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা এখনও মানি লন্ডারিং আইনে কোনো মামলা দায়ের করেনি। পুঁজিবাজার সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে কোনো মানি লন্ডারিং হচ্ছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/