স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :
গত সপ্তাহে যুদ্ধ বা যেকোন কারন হোক, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরী হয়েছিল। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তবে আমরা স্ট্র্যাটেজিক ও ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে সেই সংকট কাটিয়ে উঠেছি। এক্ষেত্রে স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমরা যে উদ্দেশ্যে এই ফান্ড গঠন করেছিলাম, সেটা সত্যিই কাজে লেগেছে। তাই শেয়ারবাজারে ভয়ের কিছু নাই বলে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। সেই সাথে এই বাজারে বিনিয়োগকারীদের পাশে সরকার থেকে শুরু করে সবাই আছে বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও শেয়ারহোল্ডারদের দাবি মিমাংসা’-কে কেন্দ্র করে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ ও বিএপিএলসির সদ্য বিদায়ী সভাপতি আজম জে চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সিএমএসএফের সিওও মনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএমএসএফ এর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আসার পর থেকে জমা হওয়া অবন্টিত লভ্যাংশ কোথায় রাখা হয়েছে বা কোথায় ব্যবহার করা হয়েছে, নাকি কেউ নিয়ে গেছে, তা খুজে বের করা হবে। এই অর্থ খুজে বের করতে আন্তর্জাতিক মানের নিরীক্ষক দিয়ে নিরীক্ষা করা হবে। এর মাধ্যমে ওই টাকা কোথায় গেছে, তা খুজে বের করব। যে টাকা নিজের না, তা আপনারা (কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট) নিলেন কেনো? অন্যের টাকা নিয়ে নিজেদের বিল্ডিং-বাড়ি বানানোর অধিকার কেউ দেয়নি।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগকারীদের দাবি মেটানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিনিয়োগকারীরা হয়তো অনেক বছর জানতোই না তাদের পাওনা টাকার বিষয়ে। আজকে পাওয়ার মাধ্যমে তাদের মধ্যে শেয়ারবাজার নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব আসবে। এই বাজারে বিনিয়োগ করলে যে রিটার্ন পাওয়া যায়, তা আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে বাহিরে ম্যাসেজ চলে যাবে। এছাড়া তাদের পাওনা আদায় করে দেওয়ার জন্য যে রেগুলেটর আছে, সেটা তাদের মধ্যে আস্থার তৈরী করবে।
তিনি বলেন, কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ জমে থাকার বিষয়টি যখন আমরা তুলে নিয়ে আসলাম, তখন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই লভ্যাংশের পাওনাদার বিনিয়োগকারীদের খুজে পাচ্ছে। ঠিক আছে পাক। আমাদের উদ্যোগের ফলে যদি বিনিয়োগকারীরা তাদের পাওনা ফেরত পায়, সেটাও ভালো।
তবে এখনো কিছু কোম্পানি থেকে অবন্টিত লভ্যাংশের হিসাব নেই বলে কমিশনে চিঠি পাঠায় বলে জানান তিনি। অনেকেই মাসের পর মাস সময় চেয়েই যাচ্ছেন। তবে ৩১ মার্চের পরে কমিশন কঠোর হবে। এখনো জরিমানা করা শুরু করিনি, তবে শীগগির কমিশন পদক্ষেপ নেবে। আমরা অনেক সময় দিয়েছে এবং অপেক্ষা করেছি। চলতি মাসের পরে আর সময় দেওয়া হবে না।
অবন্টিত লভ্যাংশের অপব্যবহারকীরদের হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, চলতি মাসের মধ্যে যদি ওই লভ্যাংশের হিসাব দিতে না পারে এবং ফান্ড কোথায় রয়েছে বলতে না পারলে ও স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে স্থানান্তর না করলে, কমিশন কঠোর ব্যবস্থা নেবে। যা অবন্টিত লভ্যাংশের থেকে কয়েকগুণ বেশি জরিমানা হবে।
শেয়ারবাজার থেকে কোম্পানির বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পলিসি করা হয়েছে উল্লেখ করে শিবলী বলেন, প্রায় ২০টি কোম্পানি এখন শেয়ারবাজার থেকে বেরিয়ে যেতে চায়। ওইসব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের অর্থ বুঝিয়ে দেবে। যেসব কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিনিয়োগকারীদের অর্থ ২০-৩০ বছর ধরে আটকে আছে।
তবে বর্তমানে বের হয়ে যাওয়া ও বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরক দীর্ঘমেয়াদি বলে জানান তিনি। এটি সহজ করার জন্য সিএমএসএফের হাতে দেওয়া হবে। এখান থেকে বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ ফেরত পাবে। এভাবে শেয়ারবাজার থেকে বেরিয়ে যেতে চাওয়া কোম্পানিগুলোর ফান্ড সিএমএসএফে নিয়ে আসার চিন্তাভাবনা করছি।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে বন্ড মার্কেট ছাড়া কোন দেশ উন্নতি হয় না বলে জানিয়েছি। আমরা এই মার্কেটটাকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি। তবে বিনিয়োগ সীমার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করার কারনে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এ বিষয়টি সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংককে সহযোগিতার জন্য বলেছি।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/জেড