স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :
জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বাজেট পেশ করায় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বৈশ্বিক টালমাটাল অবস্থায় নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখার কর্মকৌশলকে। রেকর্ড পরিমাণ বাজেট ঘাটতি থাকলেও তুলে ধরা হবে বিনিয়োগের উচ্চাশা এবং কাজের সুযোগ তৈরির স্বপ্ন। আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে সাড়ে ৭ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে সাড়ে ৫ শতাংশের ঘরে রাখতে চায় সরকার।
টানা দু’বছর করোনা মহামারি আক্রান্ত অর্থনীতির যখন ঘুরে দাঁড়ানোর সময়, তখনই আঘাত হানলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আর এতেই পাল্টে গেছে অনেক হিসেবনিকেশ। ফলশ্রুতিতে বাড়ছে খাদ্যপণ্য ও সেবার ব্যয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং কৃষি উপকরণের দামও এখন উর্দ্ধমুখী। এমন টানাপোড়েনের মধ্যে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার চ্যালেঞ্জ থাকছে আগামী বাজেটে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ বাড়ালে ভালো হতো। কিন্তু বললেই তো হবে না, অর্থের সংস্থানও থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কৌশল হচ্ছে এই টাকা দিয়ে একটি অবলম্বন দেয়া যে, এই টাকা দিয়ে চাল কিনে খাও আর খেয়ে কাজে বের হও। যদি এমন পর্যায়ে দেয়া হয় যে, এটাই আয় হয়ে যায় তাহলে কাজে বের হবে না।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা; যার অনুন্নয়ন খাতেই ব্যয় হবে দুই তৃতীয়াংশ। আর উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। গুরুত্ব পাবে কৃষি, পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। কিন্তু বাস্তবায়নে রয়েছে দুশ্চিন্তা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসির পরিচালক অধ্যাপক ড. এম. আবু ইউসুফ বলেন, কোথায় টাকাটা খরচ হচ্ছে, সেই ট্র্যাকিং পাবলিক এক্সপেনডিচার বাস্তবায়ন করা উচিত। এবং প্রস্তাবিত ব্যয়ের সাথে যেন প্রকৃত ব্যয়ের সামঞ্জস্য থাকে। তাছাড়া ডেভেলপমেন্ট বাজেটে ১৭-১৮’শ প্রকল্প থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কমিয়ে তেরশোতে নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা মনে করি, একটা গুণগত পরিবর্তন এবারের বাজেটে থাকবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি থেকে যাবে ২ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতি মেটাতে আগামী অর্থবছরে এই উৎস থেকে ঋণ নেবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। আর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়া হতে পারে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এজন্য এনবিআর’র সক্ষমতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।
সিপিডির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বছর আমাদের ঘাটতি বাজেটের যে চ্যালেঞ্জ হবে তা অন্যান্য বছরের তুলনায় কিন্তু বেশি হবে। এবং ঘাটতি অর্থায়নের চ্যালেঞ্জও হবে অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। সুতরাং, এই বছরই জাতীয় সম্পদ আহরণের পরিমাণ কীভাবে বৃদ্ধি করতে পারি, সেদিকে নজর দেয়ার সময়।
এই বাজেটে নেয়া হচ্ছে আয় বাড়ানোর কৌশল। কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ব্যাপক বিনিয়োগের পরিকল্পনাও থাকছে। বিনিয়োগের অংক দাঁড়াতে পারে ১৪ লাখ কোটি টাকায়; যা বিদায়ী অর্থবছরের বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা বেশি। বেসরকারি বিনিয়োগ হতে পারে ১১ লাখ ৮ হাজার ৬০ কোটি টাকা। আর সরকারি বিনিয়োগ ২ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন, এই বাজেটে উঁচু, নিচু, মাঝারি সবাইকেই বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। শিল্পায়নের ফলে উপকৃত হবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। তাই তাদেরকেই আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি।
তবে বাজেটের জটিল হিসাবনিকাশ বুঝতে চায় না সাধারণ মানুষ। তারা কেবল জানতে চায়, পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ধাক্কা কাটিয়ে যাপিত জীবনকে সহনীয় করতে কী অবদান রাখবে এই বাজেট, কীভাবে প্রসারিত হবে আয়ের পথ কিংবা, সংসারের খাদ্য নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত করবে এই বাজেট। আর এসব চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করাই হবে এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য।
স্টকমার্কেটবিডি.কম////