স্টকমার্কেটবিডি ডেস্ক :
ব্যবসা সম্প্রসারণের সঙ্গে কিছু ব্যাংক ঋণ পরিশোধের কথা বলে ২০১৭ সালে আইপিও প্রক্রিয়ায় যে ৪৩ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করেছিল বস্ত্র খাতের নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার, তার পুরোটাই এর মালিকপক্ষ আত্মসাৎ করেছে। এখন কোম্পানি বন্ধ, মালিকপক্ষের হদিস নেই। ঘটনার চার বছর পর আত্মসাতের ঘটনা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তদন্তে উঠে আসে। গত সপ্তাহে ডিএসইর তদন্তের ভিত্তিতে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি নূরানী ডাইং এবং এর মালিকপক্ষসহ সংশ্নিষ্ট ইস্যু ম্যানেজার ও অডিটরদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে পাঁচ বছর পর কেন এ ঘটনা নাড়াচাড়া করা হচ্ছে, এতদিন কেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং স্টক এক্সচেঞ্জ কেন ব্যবস্থা নেয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কোম্পানিটির সাবেক অডিটর আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং। শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদও একই প্রশ্ন তুলে বলেন, কোম্পানি যখন মিথ্যা তথ্য দিচ্ছিল, তখন কেন তা পরীক্ষা করা হয়নি।
প্রসপেক্টাস অনুযায়ী নূরানী ডাইং আইপিওর ৪৩ কোটি টাকার মধ্যে ২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা দিয়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি কেনার কথা। এ ছাড়া ৫ কোটি টাকা নতুন কারখানা ভবন করতে, ১১ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবি ও অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে এবং বাকি ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা আইপিও প্রক্রিয়ায় খরচ করার কথা ছিল। কোম্পানিটির আইপিও সাবস্ট্ক্রিপশন হয় ২০১৭ সালের ২ থেকে ১০ মার্চ।
ডিএসইর তদন্তে দেখা গেছে, আইপিও সাবসক্রিপশনের ৪৩ কোটি টাকা ওই বছরের মে মাসে কোম্পানিটির ইস্টার্ন ব্যাংকের হিসাবে জমা হয়। মাত্র দুই মাসের মধ্যে কোম্পানিটি পুরো টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে সরিয়ে নেয়।
তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, কোম্পানিটির ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অডিট রিপোর্টে দেখায়, কোম্পানিটির মেয়াদি ব্যাংক ঋণ ছিল যথাক্রমে ৫৮ কোটি ১২ লাখ, ৬৬ কোটি ২৮ লাখ এবং ৭৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রকৃতপক্ষে ওই তিন বছরে কোম্পানির মেয়াদি ব্যাংক ঋণ ছিল যথাক্রমে ১৬৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, ১৯২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং ২১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অতিরিক্ত ব্যাংক ঋণের আইপিও প্রসপেক্টাসেও গোপন করা হয়। প্রসপেক্টাসে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কারণ হতে পারে মালিকপক্ষ ওই ঋণের টাকা আত্মসাৎ করেছে এবং আইপিওর টাকা দিয়ে ওই ঋণ কিছুটা শোধ করেছে।
ডিএসইর তদন্তে আরও জানানো হয়, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানি ২০১৮ সালের অক্টোবরে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা খরচ দেখায়। প্রকৃতপক্ষে ২০১৭ সালে জুন মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এ টাকা প্রথমে ইউনিয়ন ব্যাংকের আশুলিয়ার বোগাবারি শাখায় স্থানান্তর করে নূরানী ডাইং। ওই টাকায় ছয়টি মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিপ্ট (এমটিডিআর) খোলা হয়। মেয়াদি সঞ্চয়ী হিসাব খোলার দুই মাসের মধ্যে পাঁচটি এমটিডিআর ভাঙিয়ে মোট ২১ কোটি টাকা তুলে নেয়। বাকি ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা প্রথমে ইস্টার্ন ব্যাংকের সোনারগাঁও শাখায় স্থানান্তর করে পরে আরাফাত স্টিল স্ট্রাকচার অ্যান্ড বিল্ডিং সিস্টেমস নামে কোম্পানিকে পরিশোধ করে। নতুন কারখানা ভবন তৈরির জন্য বরাদ্দ ৫ কোটি টাকা ২০১৭ সালের জুনে ইস্টার্ন ব্যাংকের সোনারগাঁও শাখায় স্থানান্তর করে কোম্পানি। এর পর তিনটি চেকের মাধ্যমে আরাফাত স্টিলকে পরিশোধ করে। কোম্পানিটি ভবন নির্মাণ বাবদ বা যন্ত্রপাতি আমদানি-সংক্রান্ত এলসিরও জাল নথি তৈরি করে।
বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য যাচাই করতে সংশ্নিষ্ট ইস্যু ম্যানেজার ও অডিটরদেরও শুনানিতে ডেকেছিল ডিএসই। তাঁদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে প্রকৃত তথ্যের বড় গরমিল পাওয়া গেছে। কোম্পানি ও অডিটরের দেওয়া ব্যাংক বিবরণীও ছিল জাল। সংশ্নিষ্ট ব্যাংক এসব বিবরণী তাদের নয় বলে জানিয়েছে।
নূরানী ডাইংয়ের আইপিও ইস্যু ম্যানেজার ছিল ইম্পেরিয়াল ক্যাপিটাল, ইবিএল ইনভেস্টমেন্ট এবং সিএপিএম অ্যাডভাইজরি। আইপিও অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটির অডিটর ছিল আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং। অডিট প্রতিষ্ঠানটিই আবার আইপিও অর্থ ব্যবহার-সংক্রান্ত অডিটের কাজও করেছে।
নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশীদার জাকের আহমেদ জানান, এতদিন পর কমিশন (বিএসইসি) কেন এটি ঘাঁটাঘাঁটি করছে। পাঁচ-সাত বছর আগে প্রতি মাসে অডিট রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। তখন তারা কেন দেখল না। এক-দেড় বছর আগে ডাকার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে যে তথ্য তাঁরা দিয়েছিলেন, তাতে ডিএসই শতভাগ সন্তুষ্ট ছিল। সূত্র : সমকাল
স্টকমার্কেটবিডি.কম///